প্রবন্ধ – হযরত খাজা হাসান বসরী (রা.) এর পবিত্র জীবনী

লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী

জগৎগুরু মোহাম্মদ (সা) এর সানুরাগ সংস্পর্শধন্য খাজা হাসান আল বসরী। একদিন নবী করীম (সা) এর নির্ধারিত পানি পান করার পাত্র থেকে পানি পান করে ফেললেন শিশু হাসান। পেয়ালায় পানির পরিমান কম দেখে নবী (সা) জিজ্ঞেস করলেন, পানি পান করেছে কে?
উম্মে সালমা (রা) জবাব দিলেন, হাসান।
রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, “আমার পাত্র থেকে যে পরিমান পানি সে পান করেছে সে পরিমান জ্ঞান তাকে দান করা হবে।”

লালন পালন

লালিত পালিত হয়েছেন নবুয়তের ঘরে। পান করেছেন নবীপত্নীদের স্তনের পীযূষধারা। পেয়েছেন অসংখ্য সাহাবীর সংস্পর্শ। বেলায়েতের বাহক, উম্মদের মাওলা ও ইলমের দরজা হযরত আলী (আ) এর কাছ থেকে সরাসরি লাভ করেছেন এলমে তাসাউফ তথা মারেফতের গুপ্তজ্ঞানের ভান্ডার। ইমাম হোসাইন এর সাথে তার ছিল অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব।

আধ্যাত্মিকতার পথে

নবারুণ সম প্রদীপ্ত তরুণ হাসান আল বসরী প্রথম জীবনে ছিলেন রত্ন ব্যাবসায়ী। দেশ ভ্রমণ করে রত্ন ব্যাবসা করতেন। ঘটনা ক্রমে তিনি তৎকালীন রোম সাম্রাজ্যের রাজপরিবারের একটি বিশেষ ঘটনা অবলোকন করে সর্বান্তকরনে বৈরাগ্য ও অনুতাপের দ্বারা শুদ্ধতার পথে ধাবমান একটি দরবেশী জীবন পরিগ্রহন করেন। ব্যাবসা বাণিজ্য ঘর সংসার সকল মায়া পরিত্যাগ করে শুরু করেন নির্জন তপস্যা। গভীর ও একাগ্র চিত্তে আধ্যাত্মিক জীবন বিনির্মাণের পথে শুরু হয় তার কঠোর সংযম সাধনা তথা কৃচ্ছসাধনা। সাধনাকল্পে তিনি বসরায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন। দীর্ঘ জীবন সাধনার পর তিনি জনসমক্ষে বক্তৃতা দিতে শুরু করেন। তার তাসাউফের তথা ইলমে মারেফত বা ধর্মের গূঢ় রহস্য বোধক আলোচনায় ঐশী প্রেমের ফোয়ারার দ্বার উন্মোচিত হতো। খোদা প্রেমিক মানুষের ঢল নামতো তার মজলিসে। তাপসী রাবেয়া বসরী যাদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য।

“প্রচলিত কথায় বলা হয়, সকল লোক হাসান বসরীর জ্ঞানের মুখাপেক্ষী এবং জ্ঞানী হিসেবেও তার নাম শ্রেষ্ঠতম মাকামে।”

তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছিল প্রকৃত দ্বীন মোহাম্মদীর এক ক্রান্তিকাল। নবী বিরোধী বা ধর্মবিরোধী শক্তিই কূটকৌশলের দ্বারা সেজেছিল ধর্মের কর্ণধার। উমাইয়া খিলাফত আরোপিত অপধর্মের যাতাকলে প্রকৃত ধর্মের অবস্থা ছিল কাহি মৃতবৎ। অবৈধ খিলাফতকে বৈধতা দান করার জন্য ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা হচ্ছিল রাজতান্ত্রিক নীলনকশা। যার ফলশ্রুতিতে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছিল সকল ধার্মিক, নবী প্রেমিক, আহলে বাইতের অনুসারী তথা প্রকৃত ধর্মের রক্ষকদের। সকল মহাপুরুষদের জীবনে নেমে এসেছিল অনিশ্চয়তা ও দুর্যোগের ঘনঘটা। অধার্মিকের শক্তি ও অস্ত্রের মুখে ধর্মকথা বলা ও ধর্মপথে থাকাটা হয়ে উঠেছিল প্রায় অসম্ভব। সে ক্রান্তিকালে ইমাম হাসান আল বসরী পূর্ণ শক্তি সাহস ও মনোবল নিয়ে প্রচার করে যাচ্ছিলেন ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা।

ইমাম হাসান আল বসরী (রা) ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও মূল ধর্ম তথা তাসাউফ এর অমূল্য খনি ও গুপ্ত জ্ঞানের ভান্ডার মুর্শিদ মাওলা আলী (আ) এর নিকট থেকে সঠিক ধর্ম আত্মীকরণ করে সারা জীবন বিলিয়ে গেছেন সে মহা ধন সম্ভারের ঐশ্বর্য্য ও মহিমা কিরণ। জীবনের প্রতি পলে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সূফীতত্ত্ব কে এবং সে ঐশি মহিমা ছড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বময়। নবুয়্যতের ঘরে জন্ম নিয়ে মাওলাইয়াতের সদর মহল থেকে জ্ঞান ও গুপ্ততত্ত্ব আয়ত্ব করে জগতে নিয়ে এসেছেন দ্বীন ইসলামের শাশ্বত রুপের ফাল্গুধারা। ইমাম হাসান আল বসরী থেকেই আমরা লাভ করি বেলায়েতের মুর্শিদ মাওলা আলী (আ) ফায়েজ ও জ্ঞান। মাওলা ইমাম আলী (আ) এর পবিত্র হস্ত মোবারকে মুরিদ হয়ে জাহেরী ও বাতেনী উভয় ইলম ও বেলায়ত অর্জন করে মাওলাইয়াত প্রাপ্ত হন তিনি। তিনি মাওলা আলী (আ) এর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছয়জন উত্তরসূরীর মধ্যে তিনি অন্যতম। তিনিই চিশতীয়া এবং কাদরীয়া তরিকার প্রথম মুর্শিদ।

কৃতিত্ত্ব ও অবদান

তার থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই জন খলিফা দ্বারা চিশতীয়া এবং কাদরিয়া তরিকা প্রচলিত হয়ে আসছে। খলিফা দুই জন যথাক্রমে –
১. হযরত আবদুল ওয়াহেদ বিন জায়েদ (রা)
২. হযরত হাবীব আজমী (রা)
হযরত আবদুল ওয়াহেদ বিন জায়েদ থেকে চিশতিয়া তরিকার পাঁচ খান্দান এবং হযরত হাবীব আজমী (রা) থেকে কাদরিয়া তরিকার নয় খান্দান জারী আছে।
খাজা হাসান বসরীর অমূল্য উপদেশ –
একদিন মহাত্মা মালেক ইবনে দিনার খাজা হাসান বসরী তার দুরাবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। হাসান বসরী (রা) জবাব দেন, হৃদয়ের মৃত্যুতেই প্রকৃত দুরাবস্থা। মালেক দিনার (র) আবার প্রশ্ন করেন, হৃদয়ের মৃত্যু কিরুপে? তিনি জবাব দেন, মনের সংসারাসক্তি তে।

খাজা হাসান বসরী বলেন, মানুষের জন্য চারটি জিনিস একান্ত প্রয়োজন।

  • প্রভূর সন্তুষ্টি কামনা
  • বিশুদ্ধ তন্ময়তা
  • স্বল্পে তুষ্টি
  • সংযম।

রচনাকাল – 04/04/2020
লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী

আপন খবর

সর্বশেষ পোস্টসমূহ :